Skip to main content

ক্লাউড কি??

"ক্লাউড" শব্দটি আমরা অনেকেই কম বেশি শুনেছি। অনেকেই অনেক ভালো জানেন। আবার অনেকের জানা টা ভাসাভাসা। আজ আমরা ক্লাউড এর বেসিক কিছু জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করব একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য। এমনিতেই শেষ পর্যন্ত পড়তে পড়তে চারপাশ মেঘে(Cloud)  ঢাকা মনে হতে পারে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা পর্যায়ক্রমে নিচের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলবঃ
  • ক্লাউড কম্পিউটিং কি?
  • ক্লাউড স্টোরেজ কি?
  • এটি আমরা কেন ব্যবহার করি?
  • এটি কিভাবে আমাদের নানান ডিভাইস পরিবর্তন করছে?
  • ক্লাউড এর অসুবিধা।
  • ক্লাউড এর ভবিষ্যৎ।

প্রথমে জেনে নেয়া যাক ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

খুব সহজ করে বলতে গেলে ক্লাউড কম্পিউটিং হল নিজের দরকারে আরেকজন এর জিনিসপত্র শেয়ার করা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন, এক সময় সিডি প্লেয়ার এর খুব প্রচলন ছিল। তখন ক্যাবল টিভি হরেক রকমের চ্যানেল ছিলনা।
বিনোদন ছিল সীমাবদ্ধ। তখন অনেকেই সিডি প্লেয়ার কিনে সবাই মিলে মুভি দেখতো। তো একটা মুভি সাধারণত একবার দেখার পর সেটা আর বারবার দেখা হয়না। আবার ২/৩ দিন পরপর মুভি দেখতে গেলে সিডি কিনে দেখাও পোষাতো না।  তো এই সমস্যার সবচেয়ে সহজ সমাধান ছিল ভাড়ায় সিডি এনে দেখা। সিডি ভাড়া দেয়ার ও অনেক দোকান ছিল তখন।
এতে যে কয়দিন রাখবেন সিডি সে হিসেবে দোকানে ভাড়া দিতে হবে। আবার দোকানদার এর ও লাভ। কারণ একজন গ্রাহক সিডি ফেরত দিলে সেটা দোকানে পড়ে থাকেনা ,কেউ না কেউ আবার নিয়ে যায়। সেও একই সিডির জন্য বারবার ভাড়া পায়।
বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে একইভাবে বই ও ভাড়া পাওয়া যেতো। কারণ যারা অনেক বই পড়ে তাদের সব বই কিনে পড়ার সামর্থ্য থাকেনা কিংবা অনেক বই একবার পড়লেই হয়। তো কয়েকদিনের জন্য ভাড়া পাওয়া গেলে পাঠক এর ও সুবিধা আবার যারা ভাড়া দিতো সেসব বই তাদের ও লাভ। লাইব্রেরীতে অলস পড়ে থাকার চেয়ে একই বই তারা পুনঃপুন পাঠক কে ভাড়ায় পড়তে দিয়ে লাভ করতে পারত।
যাই হোক, ক্লাউড এর ধারণার সাথে এটা কিভাবে মিলে সেইদিকে যাওয়া যাক।
ক্লাউড কম্পিউটিং হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা দেয়ার একটি মাধ্যম। ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান অন্যের রিসোর্স যেমন ভার্চুয়াল মেশিন, স্টোরেজ, কিংবা অন্য কোনো সেবা নিতে পারে। এর জন্য উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আলাদা ভাবে পুরো অবকাঠামো তৈরির কোনো দরকার পড়ে না। যেমন, আপনার কয়েকদিনের জন্য একটা হাই পারফরম্যন্স এর কম্পিউটার এর দরকার পড়ল। সবসময় যেটার কোনো কাজ নেই। এখন কয়েকদিনের জন্য এমন কনফিগারেশান এর কম্পিউটার কিনেও পোষায় না। খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাবে। তখন আপনি ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে যে কোনো ক্লাউড কোম্পানি থেকে আপনার যে কয়দিন দরকার ঠিক সেই কয়দিনের জন্য ভার্চুয়ালি আপনার দরকার মত মেশিন ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনার বাড়তি অনেক খরচ যেমন বেঁচে যাবে তেমনি কোম্পানির ও কোনো লস নাই আপনাকে কয়দিনের জন্য একটা রিসোর্স ভাড়া দিয়ে। কারণ তাদের রিসোর্স অলস বসে থাকেনা। অনবরত কেউ না কেউ ভাড়া নিচ্ছে আবার ফেরত দিচ্ছে।
Cloud Computing
এক লাইনে বলতে গেলে, ক্লাউড কম্পিউটিং একটা ব্যবসায়িক মিথস্ক্রিয়ার মত। যাতে সেবাদাতা এবং গ্রহীতা দুই পক্ষই লাভবান হয়।
আর "ক্লাউড" শব্দটা মূলত এসেছে, বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের ডায়াগ্রামে ইন্টারনেট এর অংশটুকু বোঝানোর জন্য পুঞ্জীভূত এক গুচ্ছ মেঘ ব্যবহার করা হত। সেখান থেকেই ক্লাউড নামকরণ।

এটি আমরা কেন ব্যবহার করি?

ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা আছে বিশেষ করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে। এসব জানার পরে সহজেই বোঝা যাবে আমরা কেন এটি ব্যবহার করি কিংবা করব?

১। নিজের চরকায় নিজেই তেল লাগানোর ব্যবস্থাঃ এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার চাহিদামত রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন এবং কাজ শেষে তা ফেরত দিয়ে দিতে পারেন । এতে তার বাড়তি মেইনট্যানেন্সের জন্য লোক রাখতে হয়না। যেমন ধরুন, আপনার একটা সুপারশপ আছে। এবং ২ জন সেলসম্যান আছেন।সারাদিন সেখানে কাস্টমারের ভিড় সমান থাকেনা। বিকেলের দিকে ঘন্টা তিনেক ভিড় সরবোচ্চ থাকে, তখন ২ জনের সেলসম্যানের পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হয়না। ওই ৩ ঘন্টার চাপ সামলাতে বাড়তি আরো ৩/৪ জন সেলস্ম্যান দরকার পড়ে। কিন্তু ৩ ঘন্টার জন্য বাড়তি সেলস্যম্যানদের সারাদিন তেমন কাজ নেই। সুতরাং এদের সারাদিনের জন্য বেতন দিয়ে রাখাও পোষায় না। এক্ষেত্রে ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে শুধু ৩ ঘন্টার জন্যই আপনার দরকারী সেবা আপনাকে দিতে পারে। যা আপনার অনেক খরচ বাচিয়ে দিতে সক্ষম।
২। যত লাগে তত নিনঃ এটা বলতে বোঝায় আপনার ঠিক যতটুকু লাগবে আপনি ততটুকুই নিতে পারবেন। আপনাকে বেশি বা কম নিতে হবেনা। যেমন, আজ মেন্যু বেশি ৫ টা পাতিল লাগবে রান্না করতে সুতরাং ৫ টাই নিলেন। কাল হয়ত ২ পাতিলেই হয়ে যাবে বাকি ৩ টা ফেরত দিলেন। আবার হয়ত মেন্যু বাড়ল ৭ টা পাতিল লাগবে বাড়িয়ে নিলেন। আপনার সুবিধামতই ক্লাউড কোম্পানিগুলো আপনাকে আপনার দরকারী সেবা দিবে।
৩। সেবা যত, টাকা ততঃ আপনি যতক্ষণ রিসোর্স ধরে রাখবেন ঠিক ততক্ষণের জন্যই আপনাকে টাকা দিতে হবে। রিসোর্স ছেড়ে দিলেন তো আর পে করতে হবেনা, আবার নিলেন যতক্ষণ কাজ করাবেন ততক্ষণ এর জন্য পে করার সুবিধা আছে আপনার। হোটেল এর মত নয়, যে চেক ইন করলেন তো ২০ মিনিট থাকলেও ২৪ ঘন্টার ভাড়া গুণতে হবে, আবার ২৪ ঘণ্টা থেকে ২৪ মিনিট বেশি হয়ে গেলে বাড়তি আরো ২৪ ঘণ্টার ভাড়া গুণতে হবে।
৪। যেখানে মধু, সেখানেই যদুঃ আপনি মাইগ্রেট ও করতে পারেন। আপনি যে কোম্পানি থেকে বর্তমানে সেবা নিচ্ছেন কোনো কারণে অন্য কোম্পানি থেকে আরো ভালো সেবা পেলে আপনি মুহূর্তের মাঝেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে সেই কোম্পানির সেবা নিতে পারেন। কোনো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল বা থ্রেট নাই।
৫। চৌধুরী সাহেবের মত লম্বা হাতঃ আপনি যে কোনো জায়গা থেকে ফোন বা পিসির মাধ্যমে আপনার ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ইন্টারনেটের সাহায্যে। আপনাকে এটার জন্য সারাদিন অফিসে বসে থাকা কিংবা আলাদাভাবে মেইনট্যানেন্সের কথা চিন্তা করতে হবেনা।
৬। আপনার চেয়ে আপনার ডাটার সিকিউরিটি বেশিঃ আপনি গুম হয়ে যাইতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে কিন্তু আপনার ডাটা গুম হওয়ার ভয় নেই। আপনার যদি অনেক বেশি ডাটা থাকে আপনি হয়ত আলাদা হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে ব্যাক আপ রাখলেন। কিন্তু সেই হার্ডডিস্ক যে ক্র্যাশ করবেনা সেই গ্যারান্টি নাই। আবার অন্য কোনোভাবেও আপনি ডাটা হারিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু ক্লাউডে আপনার এই ভয় নেই। আপনার ডাটা রক্ষার গ্যারান্টি ক্লাউড আপনাকে দিবে। সুতরাং এই সুযোগে আপনি নিজের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখার সময় ও পাবেন। 🙂

ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদঃ

ব্যবহারকারীর ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং ৪ ধরণের হয়ে থাকেঃ
১। পাবলিকঃ পাবলিক ক্লাউড বলতে বোঝায় যেখানে একই রিসোর্স কয়েকজন থেকে শুরু করে, কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লাখ গ্রাহক শেয়ার করতে পারে।। পাবলিক ক্লাউডে সাধারণত সফটওয়্যার সেবা দেয়া হয় (Software-as-a-Service)। যেমন, একটা উদাহরণ দেয়া যাক। গুগল এর জিমেইল তো আমরা প্রায় অনেকেই ব্যবহার করে থাকি। এটি একটি পাবলিক ক্লাউড এর উদাহরণ। গুগল এর সমীক্ষা মতে, ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মাসিক জিমেইল সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন। যেখানে প্রতিটি জিমেইল একাউন্ট আলাদা পাসওয়ার্ড এর সাহায্যে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু যেখানে এই সফটওয়্যারটি স্টোর করা আছে সেটি ১ বিলিয়ন মানুষ শেয়ার করছে। এটাই মূলত পাবলিক ক্লাউড সেবার মূল ধারণা।
২। প্রাইভেটঃ এটা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজে ব্যবহার করে থাকে। এর বাইরে কারো সাথে শেয়ার করার সুযোগ নেই।
৩। হাইব্রিডঃ এটাতে পাবলিক এবং প্রাইভেট দুইটাই আছে। একটা অংশ হয়ত পাবলিক যেখানে অন্য একটা অংশ প্রাইভেট। যেমন, একটা কোম্পানি তাদের কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য পাবলিক ক্লাউড অংশ ব্যবহার করছে, আবার কাস্টমারদের ডাটা রাখার জন্য প্রাইভেট ক্লাউড অংশ ব্যবহার করছে।
৪। কমিউনিটিঃ এটা একাধিক প্রতিষ্ঠান শেয়ার করতে পারে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে কারো এর একসেস নেই।
Types of Cloud Computing based on Users
Types of Cloud Computing based on Users
সার্ভিস বা সেবার উপর ভিত্তি করে আবার ক্লাউড কম্পিউটিং কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
IaaS: Infrastructure-as-a-Service: এতে অবকাঠামো বা Infrastructure ভাড়া দেয়া হয়। যেমন, কারো যদি একটা মেশিন লাগে তার কাজের জন্য তাহলে ভার্চুয়ালি সেই মেশিন ভাড়া দেয়া হল কিংবা নেটওয়ার্কিং সেবা দেয়া হল। যদিও গ্রাহকের কাছে এর কোনো হার্ডওয়্যার রূপ নাই তবে এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার এর মতই কাজ করে। এখানে ইউজার নিজের মত করে সেই মেশিনে দরকারী কাজ করতে পারেন।এবং পুরো নিয়ন্ত্রণ ইউজারের হাতে থাকে এই সিস্টেমে।
আর খুব সহজ করতে বলতে গেলে, ধরুন আপনি এক কাপ চা বানাবেন। ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে চা-পাতা, দুধ এবং চিনি দিবে। সেসব ক্লাউড থেকে ভাড়া করে আপনি নিজের মত করে চা বানাতে পারবেন। গাড় লিকার, হালকা লিকার যেমন খুশি। ক্লাউড কোম্পানির কাজ হবে আপনাকে শুধু উপাদান ভাড়া দেয়া। এর বাইরে কিভাবে বানাবেন, কতটুকু আগুন দিবেন, পানি কতটুকু গরম হবে সেসব নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে।
PaaS: Platform-as-a-Service: এতে প্লাটফর্ম ভাড়া দেয়া হয়। যেমনঃ অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ কিংবা কোনো সার্ভার বা মনিটরিং সিস্টেম। ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেয়ার পর হয়ত ইউজার দেখল তার কাজের জন্য কিছু বাড়তি এপ্লিকেশন বা প্লাটফর্ম লাগবে। তখন চাইলে সেটা ইউজার নিজেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করতে পারে কিংবা রেডিমেড ক্লাউড থেকে প্রয়োজনীয় সিস্টেম, ডাটাবেজ কিংবা এপ্লিকেশান ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হল, উক্ত সিস্টেম, ডাটাবেজ কিংবা এপ্লিকেশান এর নিয়ন্ত্রণ ইউজারের থাকবে না যেটা শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ ছিল।
আগের চা এর উদাহরণ টা দিয়ে বলতে গেলে এই পর্যায়ে ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে চা বানানোর জন্য রেডিমেড গরম পানি কিংবা আরো রেডিমেড চাইলে লিকার ও দিয়ে দিবে। আপনার কাজ হবে দুধ, চিনি মিক্স করে কাপে ঢালা। এক্ষেত্রে আপনি নিজের ইচ্ছেমত পানির তাপমাত্রা বা লিকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আপনাকে যেটা দেয়া হবে সেটা দিয়েই চা বানাতে হবে।
SaaS: Software-as-a-Service: এটা হচ্ছে ক্লাউডে চলা কোনো সফটওয়ার যেটা ইউজাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন তাদের মোবাইল ফোন কিংবা পিসির সাহায্যে। এদের এক কথায় ওয়েব সার্ভিস ও বলা যায়। এখানে ইউজারকে উক্ত সফটওয়্যার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়না। যেমন, মাইক্রোসফট অফিস ৩৬৫।
চা এর উদাহরণটা ই আবার দেই। এই পর্যায়ে আপনি ক্লাউড কোম্পানি থেকে রেস্টুরেন্ট সুবিধা পাবেন। আপনাকে কিছুই করা লাগবেনা। আপনি যেমন চা চান সেটাই ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে দিবে। সেটা র-টি, মিল্ক-টি, ব্ল্যাক-টি, কোল্ড-টি, আসাম-টি যা ই হোক না কেন। এখানে আপনার কাজ শুধু আরাম করে খাওয়া। কিভাবে চা বানাতে হবে, বানানোর পর পরিবেশন করতে হবে কিছু নিয়েই আর আপনার মাথাব্যাথা নাই। এই মাথাব্যাথা রেস্টুরেন্ট এর বা ক্লাউড কোম্পানির।
Types of Cloud Computing based on Services
Types of Cloud Computing based on Services

ক্লাউড স্টোরেজ কি?

ক্লাউড স্টোরেজ হল ভার্চুয়ালি ডাটা সংরক্ষণের একটি উপায়। একসময় আমরা দরকারি ডাটা পেন ড্রাইভ বা হার্ডডিস্ক এ সরংক্ষণ করে রাখতাম।সেসবের ই উন্নত এবং সিকিউর রূপ হল ক্লাউড স্টোরেজ। ধরুণ খুব প্রয়োজনীয় বা ব্যক্তিগত কোনো ডাটা হার্ডডিস্ক বা পেন ড্রাইভে রাখলেন। কোনোভাবে হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করল কিংবা পেন ড্রাইভ চুরি হয়ে গেল তখন আর কিছু করার থাকেনা। কিন্তু আপনি যদি ক্লাউড এ স্টোর করে রাখেন তাহলে এই ভয় টা আর থাকেনা।
আবার ধরুন হঠাত করে কোথাও কাউকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডাটা পাঠানো দরকার। কিন্তু ডাটা আছে বাসায় হার্ডডিস্ক বা পেন ড্রাইভে। কি করবেন তখন? আপনার সেই ডাটা যদি ক্লাউডে স্টোর করা থাকে আপনি যে কোনো জায়গা থেকে সেটা একসেস করে কাজ করতে পারবেন। আপনাকে সারাক্ষণ স্টোরেজ একসেসরিজ নিয়ে চলাফেরা করতে হবেনা।
অনেকেই গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স কিংবা মাইক্রোসফট এর ওয়ানড্রাইভ ,কিংবা এপল এর আইক্লাউড ব্যবহার করছেন। এখানে একাউন্ট খুললেই আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু স্পেস দেয়া হবে। পরে চাইলে আপনি আরো বাড়তি স্পেস ও কিনে ব্যবহার করতে পারেন। যারা এখন ও করেন না তারাও ব্যবহার শুরু করতে পারেন। একবার শুরু করলেই দেখবেন ফেঁসে গেছেন। এসব ছাড়া আর চলছেই না এমন মনে হবে।
Cloud Storage

অনেক নাম করা কোম্পানি আছে যারা ক্লাউড এর এই সেবাগুলো দিয়ে থাকে অনেক কম খরচেই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ
Cloud Computing Providers

ক্লাউড এর অসুবিধাঃ 

আচ্ছা এতক্ষণ তো ক্লাউড এর গুণগান এ করলাম। But Everything has some merits and demerits. এটা তো আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি। সেই সূত্রে ক্লাউড এর ও কিছু সমস্যা আছে।
♦ ক্লাউড এর একটা বড় সমস্যা হল সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি সমস্যা। যেমন, আপনি যে কোম্পানির ক্লাউডে ডাটা রাখলেন তারা যে আপনার ডাটা দিয়ে কিছু করছেনা তার কোনো গ্যারান্টি নাই। কিছু কনফিডেনশিয়াল সেক্টর আছে যেমন, প্রতিরক্ষা সেক্টর। তারা ক্লাউড ব্যবহার করলে তাদের জন্য সুবিধা থেকে অসুবিধা বেশি। প্রথমত তারা তাদের ডাটার সর্বোচ্চ গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন এনক্রিপশান টেকনিক ব্যবহার করতে পারে সিকিউরিটি ইস্যু নিশ্চিত করতে। কিন্তু এরপর ও কথা থাকে। তাদের ডাটা থেকে ছোট একটা অংশ কিংবা একটা সিঙ্গেল ইনফরমেশান দরকার হলে তাদেরকে পুরো ডাটাটাই আগে ডিক্রিপ্ট করতে হবে। এবং একটা ছোট অংশের জন্য পুরো ডাটাসেট ডিক্রিপ্ট করার পদ্ধতিগুলো যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমন ব্যয়বহুল ও।
♦ আরো কিছু সমস্যা আছে যেমন, ইন্টারনেট দিয়েই যেহেতু এই পুরো সিস্টেমের সাথে কানেক্ট থাকতে হয় তো ইন্টারনেটে বলতে গেলে কোনো কিছুই ১০০% সিকিউর না। তথ্য ফাঁস কিংবা করাপ্ট হবার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়।
♦ আবার কোনো কারনে ইন্টারনেট কানেকশান না থাকলে বা খুব ধীরগতির হলে ক্লাউডে কানেক্টেড থাকাও সম্ভব নয়। ক্লাউড ব্যবহারের আগে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশান নিশ্চিত করতে হবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর এইসব ইস্যু নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। হয়ত একসময় গবেষকরা সফল হবেন। ক্লাউড কোম্পানিগুলোর কাছেও আমাদের সিকিউরিটি পুরোপুরি নিশ্চিত হবে এবং ব্যবহার ও আরো সহজ হবে।

ক্লাউড এর ভবিষ্যৎঃ

ক্লাউড বিশেষজ্ঞরা ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কিছু বলেন। কিছু উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যৎবাণী ই আমরা তুলে ধরবঃ
“ট্রেডিশনাল ডাটা সার্ভিস এবং ট্রেডিশনাল প্রযুক্তি সারভিসগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নিজের কোম্পানির জন্য ডাটা সেন্টার তৈরি, যন্ত্রপাতি কেনা কিংবা বিভিন্ন সফটওয়্যার ইন্সটলেশান এসব আমরা ভুলে যাব।এই সবগুলো একটি ইকোসিস্টেমে পড়ে যাবে এবং এই ইকোসিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবে ক্লাউড।“
--David Hartley, Virtual CIO & Principal, Technology Advisory Services for UHYLLP
“ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে বিশ্বে এক অসীম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ১০/১৫ বছরের মাঝেই মানুষ রাউটার, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক এসব নিয়ে আর কথা বলবে না।“
--Marcus Vlahovic, Founder & CEO of Sustainabody
“১০/১৫ বছরের মাঝেই ৫০% ছোট কোম্পানি তাদের কোম্পানির ওয়ার্কস্টেশান এর জন্য আলাদা কম্পিউটার টাওয়ার, সার্ভার কেনার পরিবর্তে সহজভাবে একটি মনিটর, মাউস, কীবোর্ড এবং এসব নিয়ন্ত্রণ এর জন্য একটি থিন ক্লায়েন্ট কিনবে। বাকি কাজ ক্লাউড সরবরাহকারী কোম্পানিই করবে। এমন কি কোনো সফটওয়ার আপডেট নিয়ে ও ভাবা লাগবেনা।“
--Mike Smith, Founder of AeroComInc.com
“হিস্টোরি চক্রাকারে ঘুরে আসে। একসময় বড় বড় মেইনফ্রেম এবং কেন্দ্রীয় কম্পিউটারগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছিল শক্তিশালী দূরবর্তী ব্যক্তিগত কম্পিউটার দ্বারা। এবং এই শতকের প্রথম দিকে আমরা আবার ক্লাউড এর মাধ্যমে ফিরে গেছি কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ব্যবস্থায়। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হয়ত হবে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং নিউরাল ইন্টিগ্রেশান এর মাধ্যমে যন্ত্র এবং ব্রেইন কে সংযুক্ত করে দেয়া।“

Comments

  1. very skillful and knowledge full writing. go ahead
    source point.

    ReplyDelete
  2. ᐈ Welcome Bonus up to €300 + 200 Free Spins
    How to get the Welcome e스포츠 Bonus: €300 강원 랜드 바카라 + 200 1xbet скачать Free Spins for registration: Here's a look at all Casino Bonuses for players from 임요환 포커 India. 스포츠라이브스코어

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

What Fire Sprinkler? (ফায়ার স্প্রিংকলার কি?)

ফায়ার স্প্রিংকলার এমন একটি সিস্টেম যা আগুনের প্রভাব সনাক্ত করে জল নিষ্কাশনের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে করে। এটা তখনই কাজ করে যখন ইহা নিদৃষ্ট তাপমাত্রা অতিক্রম করে।ফায়ার স্প্রিঙ্কলারের অ্যাপ্লিকেশন এবং ইনস্টলেশন নির্দেশিকা এবং সামগ্রিক অগ্নি নির্বাপক  সিস্টেমের নকশা নির্দেশিকা ন্যাশনাল ফায়ার প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন (NFPA) এর নীতিমালা অনুসারে  সরবরাহ করা হয়। ফায়ার স্প্রিংকলার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন তাপমাত্রা, গঠন বা আকৃতি অনুযায়ী। ফায়ার স্প্রিঙ্কলার ভেতরে একটা কাঁচের পারদ বা এলকোহল  ভর্তি বাল্ব থাকে যা দিয়েই মূলত তাপমাত্রা সেন্সিং করা হয়। প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিনিয়ত সিস্টেম পরিবর্তন হচ্ছে। গঠন বা আকৃতি অনুযায়ী অনেক ধরনের স্প্রিংকলার রয়েছে। মূলত আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয় ৪ ধরণের স্প্রিংকলার । যেমন:     ১) Upright Sprinkler                                                      ২) Pendent Sprinkler                               ৩) Horizontal & Vertical Sidewall Sprinkler ৪) Concealed Sprinkler এছাড়াও অনেক ধরণের স্প্রিংকলার রয়েছে , যেমন: কুইক

UPS (Uninterruptible Power Supply)

সাধারণত UPS এর capacity নির্ভর করে তার VA উপর ।  আমাদের  দেশে  ৬৫০ VA,  ৮৫০ VA,  ১২০০ VA  - এর  সহজ লভ্যতা  বেশি।  Apparent পাওয়ার এর একক হলো VA.  রিয়েল পাওয়ার এবং রিএক্টিভে পাওয়ার   এর  সমষ্টি হলো  Apparent  পাওয়ার । ইউপিএস এর পাওয়ার ব্যাকআপ ক্যালকুলেশন : No. of battery X Volt X AH X P.F Load

ব্যান্ডউইথ কি?

একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন চ্যানেল দিয়ে যে পরিমাণ ডেটা স্থানান্তরিত হয় তার পরিমাণকে ব্যান্ডউইথ হিসেবে পরিমাপ করা হয়। ডেটা ট্রান্সমিশন-এর একককে bps (bit per second)-এ হিসাব করা হয়। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ডেটা বিট স্থানান্তরিত হয় তাকে bps বলে। এটিকে Band বা Bandwidth বলা হয়।  ব্যান্ডউইথ টার্মটিকে বোঝার জন্য, একে আপনি পানির নলের বা ট্যাপের সাথে তুলনা করতে পারেন। যদি ট্র্যান্সফার রেট বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আরো দ্রুত পানি প্রবাহিত হতে আরম্ভ করবে। একটি পানির পাইপে অবশ্যই লিমিট থাকে, আপনি একটি সময়ের মধ্যে কতোটুকু পানি প্রবাহিত করতে পারবেন। এবার ধরুন আপনি ব্রডব্যান্ড কানেকশন থাকে  মুভি ডাউনলোড  করছেন, ঐ কানেকশন থেকেই  ভিডিও স্ট্রিমিং  করছেন, ম্যাল্টি প্লেয়ার গেমিং করছেন,  ভিওআইপি  কলিং করছেন—এভাবে আপনি যতো বেশি দিক থেকে ব্যান্ডউইথ খরচ করতে থাকবেন আপনার কানেকশন ততো স্লো হয়ে যাবে। এবার পানির নলের উদাহরন নেওয়া যাক, আপনার বাড়িতে একটি প্রধান পানির নল রয়েছে যেটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমানে পানি ট্র্যান্সফার করার ক্ষমতা রাখে। এখন আপনি যদি কিচেনের নল, বাথরুমের নল, বাগ

ইন্ক জেড প্রিন্টার

পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ইন্ক জেড প্রিন্টিং হেড প্রযুক্তির নাম '' মাইক্রো পিয়েজো ইলেকট্রিক টেকনোলজি''। এটি একটি জাপানি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রিন্টিং সিস্টেমটি মূলত লিকুইড ইংক ট্যাংক (ড্রাম) সিস্টেমের। ভালো প্রিন্ট কোয়ালিটি নির্ভর করে প্রিন্টিং রেজুলেশনের উপর। যে প্রিন্টারের প্রিন্টিং রেজুলেশন যত বেশি, তার প্রিন্টিং কোয়ালিটি তত ভালো। প্রিন্টিং রেজুলেশনের একক কে ডিপিআই ( dpi) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি আদর্শ প্রিন্টার এর নিম্নাক্ত অংশগুলো বিদ্যমানঃ ১) ইঙ্ক ট্যাঙ্ক। ২) প্রিন্টিং হেড। ৩)  প্রিন্টিং হেড ক্যাবল। ৪) এডাপ্টার। ৫) মাদার বোর্ড। ৬) সেন্সর। ৭) এনকোডার। ৮) ওয়েস্টিং প্যাড। ৯) পাম্পিং ইউনিট। ১০) টপ রোলার। ১১) বটম রোলার। ১২) মটর। ১৩) ক্যারিয়ার। ১৪) পেপার রোলার।

Wifi ( ওয়াই-ফাই) টেকনোলজি

Wi-Fi এর পূর্ণ অর্থ Wireless Fidelity. ইহা একটি টেকনোলজি যা, তার বিহীন সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। এটি IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers) এর পরিবারভুক্ত কমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ড 802 এর অন্তর্গত। 802 এর স্ট্যান্ডার্ডগুলো নিম্নরুপঃ আবার, এই 802.11 এর বেশ কিছু সাব-স্ট্যান্ডার্ড আছে, যেমনঃ 802.11a, 802.11b, 802.11g, 802.11n, 802.11ac etc. Wi-Fi signal কিছু  ব্যন্ডওয়াইথের মাধ্যমে ট্রান্সমিট ও রিসিভ হয়। এগুলো হলো 1.8 GHz Band, 2.4 GHz Band, 5GHz Band. এই ব্যন্ডওয়াইথগুলোর নিদৃষ্ট কিছু চ্যানেল আছে।  2.4 GHz Band এ ১৪ টি চ্যানেল, 5GHz Band এ ২৪ টি চ্যানেল।